ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক
- আপলোড সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ০২:০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ০২:০২:৪৮ পূর্বাহ্ন

“অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম (১৩) জামালগঞ্জের একটি মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই ছাত্রীটিকে উত্ত্যক্ত করতো সাইফুল আলম। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি যাওয়ার পথে কিশোরীটিকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে সারাদিন রেখে রাতে ভীমখালি ইউনিয়নের কলকতখাঁ গ্রামে সাইফুলের বন্ধু বদরুলের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং রাতে কিশোরীটিকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে শুক্রবার সকালে সাইফুল মেয়েটিকে তার গ্রামের বাড়ি ফেনারবাক ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ভিকটিমের বড়বোন বাদী হয়ে জামালগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৩, তারিখ ২৬/৪/২০২৫ইং।”
গণমাধ্যমের সংবাদপ্রতিবেদন থেকে এই বাক্য কতিপয় উদ্ধৃত করার পর বলতেই হয় যে, আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে জানমালের কোনও নিশ্চয়তা তো নেইই, এমনকি ‘মেয়ে মানুষ’ নামে দাগিয়ে দেওয়া মানুষের তথাকিথিত ‘সতিত্ব’ রক্ষারও
কোনও উপায় নেই। প্রকারান্তরে মুক্তযৌনতার দেশে পর্যবসিত হয়ে গেছে এই দেশ। এখানে অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েরাও কিছু পুরুষের লালসার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ এই পুরুষেরা পুরুষ শাসিত সমাজেরই সদস্য। অভিজ্ঞমহলের ধারণা, এই সমাজের অন্য পুরুষেরা যদি ধর্ষকের প্রতিবৈরীভাবাপন্ন হতো এবং ধর্ষকেরা পার পেয়ে যাওয়ার অবকাশ না পেতো, তাহলে কেউই ধর্ষণ করতে সাহসী হতো না কীছুতেই। আসলে আমাদের সমাজটাই পুরুষের ধর্ষণপ্রবণতাকে প্রশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কেউই যেন ধর্ষণের বিরুদ্ধে তৎপর নয়। বরং সালিশ কিংবা নিষ্পত্তি বিচার ইত্যকার কার্যপ্রহসনাদির মাধ্যমে ধর্ষককে রক্ষার উপায়সংস্কৃতির চর্চা চলে দেশের সর্বত্র। গণমাধ্যমে তার দেদার দৃষ্টান্ত মেলে।
গতকালের (২৮ এপ্রিল ২০২৫) দৈনিক প্রথম আলোর মুদ্রণসংস্করণ থেকে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। ১৩ বছর বয়সের কিশোরী নয়নতারা (ছদ্মনাম) ধর্ষিত হয়ে গর্ভবতী হয়েছে। বলা হয়েছে, “নয়নতারার মা যুবকটির মা বাবার কাছে বিচার নিয়ে গেলে তারা উল্টো নয়নতারা ও তার মাকে বকাঝকা করে বিদায় করে দেন। নয়নতারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছেও বিচার পায় না। নয়নতারার মা মেয়েকে নিয়ে কোর্টে এসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়নি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। অথচ নয়নতারার কোলে রয়েছে একটি জীবন্ত শিশু।”
অপরাধীর মা-বাবা, মামলার তদন্ত প্রতিবেদক এবং সমাজের সাধারণ মানুষ কেউই ধর্ষিতা নয়নতারার পক্ষে দাঁড়ায়নি, প্রকারান্তরে ধর্ষকের পক্ষাবলম্বনই করেছে। কেবল পক্ষে দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞান। এতে যা কীছু হচ্ছে তাতে প্রতিপন্ন হয়ে যে, এই সমাজটা আসলেই
পুরুষ কর্তৃক নারীর সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম করার জন্যে গঠিত হয়েছে। যদিও বলা হয়, সমাজ তো পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মানুষের যৌথযাপন। বুঝাই যায় যে, এমনটা সত্য নয়, প্রতারণামূলক প্রচার মাত্র। এখানে ছ’সাত বছরের মেয়েকেও ধর্ষণ করে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলছে পুরুষেরা।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা, এমতাবস্থায় ধর্ষককে চিহ্নিত করার জন্যে আইনকে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হওয়ার পথ আইনগতভাবেই সুগম করে দিতে হবে। অর্থাৎ ধর্ষণের ঘটনা কিংবা মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে ধর্ষককে চিহ্নিত করে তার কঠোর দ- নিশ্চিত করাই অধিক সঙ্গত এবং এমন ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার খরচ অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ